শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ অপরাহ্ন

দক্ষ প্রশাসক খুঁজছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

দক্ষ প্রশাসক খুঁজছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

স্বদেশ ডেস্ক:

সেবার মান বাড়িয়ে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিভিন্ন দপ্তরে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পদায়ন দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ পদের জন্য দক্ষ প্রশাসক খুঁজছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, শুদ্ধাচার ও সুশাসন নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয়ের এপিএ (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি) রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এপিএ একটি স্বনিয়ন্ত্রিত কৌশল, যা সংস্থাকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত করে। এমনকি এপিএ কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। মন্ত্রণালয়ের দপ্তরগুলোর কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে ওই মন্ত্রণালয়ের এপিএর সূচক। এ ক্ষেত্রে দপ্তরে দক্ষ প্রশাসক না হলে এ সূচকে প্রভাব পড়বে। যে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামীতে দক্ষ ব্যক্তিদের শীর্ষ পদে বসাতে চায়।

জানা গেছে, সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) শীর্ষ পদ শূন্য হয়েছে। এসব পদ পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব পদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়ার পর আগ্রহীরা নড়েচড়ে বসেছেন। চলতি সপ্তাহে এ পদে নিয়োগের জন্য নামের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ পদের জন্য এখন চলছে ব্যাপক লবিং। রাজনৈতিক আনুকুল্য পেতে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতির অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টাও তুলে ধরছেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের সামনে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বছরে সাত থেকে আটশ কোটি টাকার পাঠ্যবই মুদ্রণ-বিতরণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকা-ের মধ্যে বড় একটি কাজ হচ্ছে এই সরকারি বিনামূল্যের বই ছাপানো সরবরাহ করা। এ পদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের আগ্রহ বেশি। অন্যদিকে মাউশি মহাপরিচালকের পদটি অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। এটি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পদটি খুবই আকর্ষণীয় বলে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাছে বিবেচিত হয়। এ পদে নিয়োগের জন্য সরকারপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ পদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। নিয়মানুসারে, শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে থেকে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিজি নিয়োগের কথা থাকলেও গত ২০-২৫ বছর ধরে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে। সূত্রমতে, শিক্ষাভবন হিসেবে খ্যাত মাউশি রীতিমতো অবৈধ টাকার খনি। এখানে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ বহু পুরনো। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৫ হাজার কর্মকর্তার নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতি, টাইম স্কেল, বিদেশে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কর্মকর্তা বাছাই করে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে মাউশি। পাশাপাশি সারাদেশের সাড়ে ৬ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তি, টাইম স্কেলসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এ কার্যালয়ের। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রতিষ্ঠানের ডিজি পদে নিয়োগ পেতে সরকার সমর্থক শিক্ষকরা ব্যাপক লবিংয়ে নেমেছেন।

শিক্ষা খাতের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, অসংখ্য পদপ্রত্যাশীদের মধ্য থেকে এ পদের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হতে পারে। তারা হলেন সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক (আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক), ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আজমতগীর, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও স্বাধীনতা বিসিএস শিক্ষা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া ওই পদের জন্য মাউশির সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে ধামরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সেলিম মিয়া, মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য, মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক শফিউল আযম এবং ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকারের নামও জোরেসোরে আলোচিত হচ্ছে।

জানা গেছে, নানাভাবে আলোচনায় এগিয়ে থাকা এই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নীতিনির্ধারকের আশীর্বাদ রয়েছে। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ রাষ্ট্রের একজন ভিভিআইপির আপন ভাগনে এবং তিনি শিক্ষা ক্যাডারে সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিতি। অধ্যাপক নাসির উদ্দিনের পক্ষে শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা একাট্টা হয়েছেন। অধ্যাপক সেলিম মিয়ার পক্ষে চিফ হুইপের আশীর্বাদ আছে। অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ পদ হওয়ায় এ পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেও নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। এ ক্যাডারের সব অধ্যাপক জাতীয় বেতন স্কেলের তৃতীয় গ্রেডপ্রাপ্ত নন। তাই গ্রেডেশন তালিকা অনুসারে তৃতীয় গ্রেডপ্রাপ্ত, শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ জ্যেষ্ঠ ১০ কর্মকর্তা আছেন নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যাপক (ব্যবস্থাপনা) ড. মো. আলাউদ্দিন (২৫৫৯), সিরাজগঞ্জ ইসলামীয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান) ড. এসআইএমএ রাজ্জাক (৪৮৯১), মাউশির সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক (১৯৫৪০), যশোর সরকারি এমএম কলেজের অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ড. মো. হাসান সোহরাওয়ার্দী (১০১৭১), মাউশিতে ওএসডি থাকা অধ্যাপক (রাষ্টবিজ্ঞান) মো. সাইদুর রহমান (১৪৮২), গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের (সাবেক গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ) অধ্যক্ষ ইসমত রুবিনা (৮৯৬৬), বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ ও গণিতের অধ্যাপক মো. শাহজাহান আলী (৪৯৯০), বরিশালের হায়ার সেকেন্ডারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (এইচএসটিটিআই) পরিচালক ও গণিতের অধ্যাপক মো. শাহ আলম (২৫৪৫), ধামরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলা বিষয়ের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম মিয়া (৯৮) এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও রসায়নের অধ্যাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক (৫৯৭৬)।

অতীতের মহাপরিচালক নিয়োগের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও বর্তমান সরকারের আমলে জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি সব সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। কেবল ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেবকে মাউশির মহাপরিচালক করা হয়েছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877